world cup 2015 cowndown

Custom Search

Wednesday, June 5, 2013

কীভাবে আপনি জান্নাত লাভ করবেন পর্ব – ১

কীভাবে আপনি জান্নাত লাভ করবেন পর্ব – ১


প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু
পর্ব- ১ | পর্ব - ২
লেখকঃ ইউসুফ ইবন মুহাম্মাদ আল ‘উয়াইয়েদ | অনুবাদ: ড. মোহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী |  সম্পাদনা: ড. আবু বকর মোহাম্মদ যাকারিয়া
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জান্নাতের ওয়াদা করেছেন এবং জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন..... সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করলো সে মহা সফলতা অর্জন করলো...। আবারো ঐ আল্লাহ পাকের প্রশংসা যিনি আমাদেরকে জান্নাতের পথে আহবান করছেন। আল্লাহ সুবহানাহু বলেন:

﴿ وَٱللَّهُ يَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ وَٱلۡمَغۡفِرَةِ بِإِذۡنِهِۦۖ﴾ [البقرة: من الآية 221] .

‘‘আল্লাহ তাঁর অনুমতিক্রমে জান্নাত ও মাগফিরাতের দিকে আহবান করছেন’’। [সূরা আল বাক্বারাহ: ২২১]
তিনি জান্নাতের বর্ণনা দিয়েছেন যে, জান্নাতে আছে সুমিষ্ট পানির নহর, দুধের ঝর্ণাধারা যার স্বাদের কোন পরিবর্তন নাই, শরাবের নহর যা পানকারীদের জন্য উপাদেয় এবং খাঁটি মধুর স্রোতস্বিনী। এর তলদেশ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার নদী নালা প্রবাহিত। এখানে বাসনা অনুযায়ী, চোখজুড়ানো সকল চাহিদা পূর্ণ হবে। প্রত্যেক মু’মিন তার ঈমানদার সন্তানাদি, সৎকর্মশীল ব্যক্তি এবং শহীদগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবে। আর সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ ও শহীদগণ কতই না উত্তম বন্ধু! বরং মু’মিন ব্যক্তি এর চেয়ে আরো উত্তম বস্তু লাভ করবে। আর তা হলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ এবং তাঁর হাওযের পাশে অবস্থান। অধিকন্তু সেখানে সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট নেয়ামত প্রাপ্তির যে ওয়াদা আল্লাহ করেছেন তা পূর্ণ হবে যখন মু’মিন ব্যক্তি তার প্রভুকে কোন পর্দা ছাড়াই সরাসরি দেখতে পাবে।
হ্যাঁ, এ হচ্ছে জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণেই মানুষ তাদের রবের একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ কারণেই তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করে। এ জান্নাত লাভের আশায় মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বায়‘আত নিয়েছে।
এ জান্নাতই শেষ গন্তব্য বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু যার ইন্তেযার করছেন, যেদিন বেলালকে উত্তপ্ত বালুর উপর চিৎ করে শুইয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দেয়া হয়েছিল এবং তিনি মুশরিকদের দেয়া এ কষ্টে ধৈর্য্যধারণ করেছিলেন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাসজিদে আযান দেয়া অব্যাহত রেখেছিলেন।
এ জান্নাতই হচ্ছে সে বিশাল গনীমত আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহু যার জন্য অপেক্ষা করেছেন, যে দিন তাকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল, তার পিতা মাতাকে হত্যা করা হয়েছিল - যারা ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। এ জান্নাত পাওয়ার আশাই উমাইর ইবন হামামকে অহুদ যুদ্ধের দিন কয়েকটি খেজুর খাওয়া থেকে বিরত রেখেছিল; যেহেতু তিনি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পাগলপারা হয়ে উঠেছিলেন। আল্লাহও প্রতিদানে তাকে দ্রুত শাহাদাত নসীব করেছেন। এ জান্নাতের আশা-ভরসায় আল্লাহর ভয়ে প্রত্যেক আবেদের চোখ থেকে পানি ঝরে। প্রত্যেক মুজাহিদ আল্লাহর জন্য নিজের জান বিক্রি করে দেয়। প্রত্যেক আলেম স্বীয় ইলম অনুযায়ী আমল করে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়। এ কারণেই ঈমানদার ব্যক্তি সালাত ও অন্যান্য ফরযসমূহ আদায় করে, আর মানুষ তার ঈমানের সাক্ষ্য দেয়। সে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে। তার অন্তর দ্বীন, মাসজিদ এবং আল্লাহর প্রতিদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ, এ জান্নাত পাওয়ার কতিপয় কারণ রয়েছে। আর প্রত্যেকে একটি উপায় অবলম্বন করবে যাতে সে জান্নাতের যে কোন একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং কোন মু’মিন তার সালাতের কারণে জান্নাতে যাবে, কেউবা রোযা বা যাকাত বা হজ্জ কিংবা উত্তম চরিত্র, কেনাবেচা ও জিহাদের কারণে জান্নাতে যাবে। বরং আল্লাহর রহমাত ও অনুগ্রহ এত প্রশস্ত যে, কোন কোন বান্দাকে তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাত দান করবেন শুধু এ কারণে যে, সে ব্যক্তি দুনিয়াতে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিয়ে মানুষকে কষ্টমুক্ত করেছে, তৃষ্ণার্ত পা্রণীকে পানি পান করিয়েছে এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে।
সুতরাং জান্নাতে প্রবেশের উপায় যদি চয়ন করতে চান, তাহলে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের সুললিত ও সুরভিত বাণী আপনার সমীপে পেশ করা হচ্ছে। সাধ্যানুযায়ী উপায় আপনি চয়ন করুন। হতে পারে এ কারণে আপনি একাধিক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ লাভ করতে পারবেন। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এমন সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।
জান্নাত লাভের উপায়সমূহ
১. জান্নাতে প্রবেশের প্রথম উপায় হলো: শাহাদাত অর্থাৎ একথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর সত্য কোন ইলাহ নেই, যিনি একক, যার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলামের এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, এর যাবতীয় আরকান পালন করবে, আর এক অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন:

«من شهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله، وأن عيسى عبده ورسوله وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه ، والجنة حق والنار حق أدخله الله الجنة ما كان من العمل» (متفق عليه).

‘‘যে ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, ‘এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং আল্লাহর কালেমা যাকে তিনি মারিয়ামের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রূহ, আর জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য’। আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই হোক না কেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]
আল্লাহ বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٣ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٤ َ﴾ [الأحقاف: 13-14]

‘‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এ কথার উপর সুদৃঢ় থাকে। তাদের কোন ভয় ভীতি নেই, তাদের কোন চিন্তা নেই। তারাই জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ জান্নাত তারা তাদের কৃত কর্মের ফল স্বরূপ লাভ করবে। [সূরা আল আহক্বাফ: ১৩-১৪]
আয়াতে উল্লেখিত الاستقامة শব্দটির অর্থ হল: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

«كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى، فقالوا يا رسول الله ومن أبى؟ قال من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى» (رواه البخاري).

‘‘জান্নাত পেতে আগ্রহী নয় এমন ব্যক্তি ছাড়া আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে এমন ব্যক্তি আছে যে জান্নাতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে’’। [বুখারী ]
২. আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ মুখস্থ করা এবং এ নামগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা জান্নাতে প্রবেশের একটি উপায়। আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

«إن لله تسعة وتسعين اسما، مائة إلا واحدا، مَن أحصاها دخل الجنة».

‘‘আল্লাহর নিরানববইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো গণনা করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [বুখারী ও মুসলিম]
৩. আল কুরআনের অনুসারীগণ, যারা আল্লাহর আহল ও তাঁর খাস বান্দা, কুরআন তাদের জান্নাতে প্রবেশের উপায় হবে। আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«يقال لصاحب القرآن: اقرأ وارتق، ورتل كما كنت ترتل في الدنيا، فإن منزلتك عند آخر آية تقرأ بها» (رواه الترمذي وأبو داود وابن ماجة وصححه الألباني).

‘‘আলকুরআনের সঙ্গীকে বলা হবে: কুরআন পাঠ কর, আর মর্যাদার উচ্চশিখরে আরোহণ কর। আর তেলাওয়াত করতে থাক। যেমন দুনিয়াতে তেলাওয়াত করছিলে; কেননা তোমার মর্যাদা হলো কুরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করবে’’। [তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো প্রমাণিত রয়েছে যে, কতিপয় সূরা ও আয়াত জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম।
আবু উমামা থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«من قرأ آية الكرسي في دبر كل صلاة مكتوبة لم يمنعه من دخول الجنة إلا أن يموت».

‘‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে’’। [নাসায়ী, তাবারানী, ইবনে হিববান এটি বর্ণনা করেছেন ও আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

«سورة من القرآن ما هي إلا ثلاثون آية خاصمت عن صاحبها حتى أدخلته الجنة وهي تبارك».

‘‘৩০ আয়াত বিশিষ্ট কুরআনের একটি সূরা, এর পাঠকের জন্য জান্নাতে না নেয়া পর্যন্ত সুপারিশ করতেই থাকবে। সূরাটি হল তাবারাকা’’ (তথা সূরা মূলক)। [তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী বিশুদ্ধ বলেছেন]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি মাসজিদে কোবায় আনসার সাহাবীদের ইমামতি করতেন। তিনি প্রতি রাকাতেই قل هو الله أحد সূরাটি পাঠ করতেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কোন কারণে প্রতি রাকাতে এ সূরাটি পাঠ কর? উত্তরে সে সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ সূরাটি খুব পছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, এ সূরাটি পছন্দ করার কারণেই তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ইমাম বুখারী হাদীসটি সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী ও আলবানী হাদীসটিকে উত্তম ও সহীহ বলেছেন]

৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«من سلك طريقا يلتمس فيه علما سهل الله له به طريقا إلى الجنة» (مسلم).

‘‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয়, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন’’।[মুসলিম]
৫. আল্লাহ তা’লার যিক্‌র: আল্লাহর তাসবীহ (স্তুতি), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাকবীরের ফযীলত সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«لقيتُ ليلة أسري بي إبراهيمَ، فقال يا محمد، أقرئ أمتك مني السلام وأخبرهم أن الجنة طيبة التربة، عذبة الماء، وأنها قيعان وأن غراسها سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر».

‘‘মেরাজের রাতে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মাতকে আমার সালাম বলো এবং তাদেরকে এ সংবাদ দাও যে, জান্নাতের মাটি সুন্দর, পানি মিষ্টি, আর জান্নাত সমতল এবং এর বৃক্ষরাজি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’’। [তিরমিযী এটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী তাকে উত্তম বলেছেন]

৬. জান্নাতে প্রবেশের উপায়সমূহের মধ্যে আরো একটি হল প্রতি সালাতের পর আল্লাহর যিক্‌র পাঠ: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, গরীব মুহাজিরগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন. ধনী ও বিত্তবান লোকেরা তো আল্লাহর নিকট সুউচ্চ মর্যাদা এবং নানাবিধ নেয়ামত লাভে ধন্য হয়ে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কীভাবে? তারা জবাব দিলেন যে, আমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও সালাত আদায় করে। আমরা যেমন রোযা পালন করি তারাও রোযা পালন করে। কিন্তু তারা দান সদকা করে আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম আযাদ করে আমরা তা করি না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেব, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমকক্ষ হবে, আর তোমাদের পরবর্তীদের চেয়ে অগ্রগামী হবে? আর তোমাদের চেয়ে উত্তম কেউ হবে না, সে ব্যক্তি ছাড়া যে তোমাদের মতই এ কাজগুলো করবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে সে কাজ শিক্ষা দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার, আর ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবে’’। [মুসলিম]
৭. অনুরূপভাবে অযুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠও জান্নাতে যাওয়ার উপায়। উকবাহ ইবন আমের বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ সুন্দর করে অযু করার পর যদি বলে:

«أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله».

তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসলিম]
৮. لا حول ولا قوة إلا بالله  এ দো‘আ হল জান্নাতের ভান্ডার: আবু মুসা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডার সমূহের একটি ভান্ডার সম্পর্কে অবহিত করব? আমি বললাম: হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেন, বলো:  لا حول ولا قوة إلا بالله অর্থ্যাৎ: ‘‘আল্লাহর আশ্রয় ও শক্তি ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা নাই’’। [বুখারী, মুসলিম]
৯. আল্লাহর নিকট জান্নাত চেয়ে দো‘আ করলে জান্নাত তখন আমীন আমীন বলে সমর্থন করে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি ৩ বার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে: হে আল্লাহ্! ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দো‘আ করে, জাহান্নাম বলে: হে আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দাও। [তিরমিযি, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ এটি বর্ণনা করেছেন, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]।
১০. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগফেরাত কামনার দো‘আকে সাইয়্যেদুল্ ইসস্তিগফার বা গুনাহ মাফ চাওয়ার প্রধান দো‘আ বলে অভিহিত করেছেন এবং জান্নাতে প্রবেশের কারণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং প্রিয় পাঠক! দো‘আটি মুখস্থ করুন এবং সকাল সন্ধ্যা পাঠ করুন।
শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেন তিনি বলেন, ইস্তেগফারের প্রধান দো‘আ হলো:

«اللهم أنت ربي لا إله إلا أنت خلقتني وأنا عبدك وأنا على عهدك ووعدك ما استطعت، أعوذ بك من شر ما صنعت، أبوء لك بنعمتك عليَّ وأبوء لك بذنبي فاغفر لي فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت».

‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া আর কোন সত্য মা’বুদ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা। আমি তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকারের উপর সাধ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। আমি অনিষ্টকর যা কিছু করেছি তা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর তোমার যে নেয়ামত আছে তার স্বীকৃতি দিচ্ছি। তোমার নিকট আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও; কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না’’।
যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে দিনে এ দো‘আ পাঠ করে, সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে রাতে পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, সে জান্নাতবাসী হয়’’। [বুখারী]
১১. সালাত হলো দ্বীনের খূঁটি। আল্লাহ আমাদের উপর দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। আল্লাহর নিকট প্রিয় ইবাদাত হলো তাঁর ফরয কাজসমূহ। যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ফরয কাজসমূহ আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ওবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাতসমূহের হকে কোন প্রকার কমতি ও তাচ্ছিল্য না করে সঠিকভাবে সেগুলো আদায় করে, তার জন্য আল্লাহর এ অঙ্গিকার যে, তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে এগুলোর ব্যাপারে কমতি ও তাচ্ছিল্য করে তা আদায় করবে, তার প্রতি আল্লাহর কোন অঙ্গিকার নেই। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন, আবার ক্ষমাও করতে পারেন’’। [হাদীসটি মোয়াত্তায়ে মালিক, মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে। আর আলবানী একে সহীহ বলেছেন]।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর ও আসরের দু’ ওয়াক্ত সালাতের পৃথক মর্যাদা দিয়ে এগুলোর নাম দিয়েছেন ‘বারাদাইন’ অর্থাৎ দু’টি শীতল ওয়াক্তের সালাত। আবু মূসা আশআ’রী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«من صلى البردين دخل الجنة»

অর্থাৎ ‘‘যে ব্যক্তি শীতল ওয়াক্তের দুই সালাত (ফজর -আসর) আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [বুখারী ও মুসলিম]
১২. কতিপয় সুন্নাত ও নিয়মিত সালাত আছে যেগুলো দ্বারা ফরয সালাতগুলোর কমতি পূরণ করা হয় এবং এগুলোর পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। সুতরাং সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হোন, তাহলে আল্লাহ আপনাকে হেফাযত করবেন।
উম্মে হাবীবা রাদি আল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন: ‘‘যে মুসলিম ব্যক্তিই ফরযের অতিরিক্ত প্রতিদিন ১২ রাকাত সুন্নাত সালাত আল্লাহর জন্য আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’। [মুসলিম]
এ সুন্নাত সালাতগুলোর বর্ণনা এভাবে এসেছে: ‘‘যোহরের পূর্বে ৪ রাকাআত, পরে ২ রাকাআত, মাগরিবের পরে ২ রাকাআত, ইশার পর ২ রাকাআত এবং ফজরের পূর্বে ২ রাকাআত’’।
১৩. কোন ব্যক্তি যখন অযু করে, তখন তার জন্য ২ রাকাআত সালাত আদায় করা সুন্নাত। এ সালাত যখন সে নিষ্ঠার সাথে ও একাগ্রচিত্তে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আদায় করে, তখন তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে যায়।
উকবাহ ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«ما من أحد يتوضأ فيحسن الوضوء ويصلي ركعتين يقبل بقلبه ووجهه عليهما إلا وجبت له الجنة» (رواه مسلم).

‘‘ যে ব্যক্তিই সুন্দর করে অযু করে উপস্থিত মন নিয়ে ও একাগ্রচিত্তে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’’। [মুসলিম]
১৪. দ্বীন ইসলামের উত্তম দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে: সালামের প্রসার করা, খাদ্য দান করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আর সত্যবাদীদের গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে তারা হল রাতের নফল সালাত আদায়কারী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ َ﴾ [الذاريات: 17-18]

‘‘তারা রাতের কম অংশই নিদ্রায় মগ্ন থাকে। আর শেষ রাতে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে’’। [সূরা আযযারিয়াত: ১৭-১৮]
যারা উপরোক্ত কাজগুলো করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«يا أيها الناس أفشوا السلام وأطعموا الطعام وصلوا الأرحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام».

‘‘ হে মানব সকল! সালামের প্রসার কর। খাদ্য দান কর। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। লোকেরা ঘুমিয়ে গেলে রাতে নফল সালাত আদায় কর। তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]।
১৫. ফজরের সালাতসহ অন্যান্য সালাতের উদ্দেশ্যে মাসজিদে গমন করার কারণে আল্লাহ তা’লা আপনার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

«من غدا إلى المسجد أو راح أعد الله له في الجنة نزلا كلما غدا أو راح».

‘‘যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা মাসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ সকাল বিকাল যখনই সে গমন করে জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]
১৬. সালাতের কাতারে মুসল্লীদের মাঝে যে ফাঁক দেখা যায় তা আপনি পূরণ করলে আপনার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«من سد فرجة في صف رفعه الله بها درجة وبنى له بيتًا في الجنة».

‘‘যে ব্যক্তি সালাতের কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করলো, এর দরূন আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’। [তাবারানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]।
১৭. আপনি যদি মাসজিদ নির্মাণ করেন অথবা মাসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করেন, তাহলে আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন:

«من بنى مسجدا لله بنى الله له في الجنة مثله» (متفق عليه).

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরী করলো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]
১৮. দিনরাতে পাঁচবার মুয়াযযিনের আযানের জবাব দেয়া জান্নাতে প্রবেশের আরো একটি কারণ। উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘মুয়াযযিন যখন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার (২বার) বলে, তখন তার উত্তরে কেউ যদি অনুরূপ বলে; অতঃপর মুয়াযযিন (أشهد أن لا إله إلا الله) বললে সে তার মতো (أشهد أن لا إله إلا الله) বলে। মুয়াযযিন যখন (أشهد أن محمدا رسول الله) বলে, সেও তাই বলে। তারপর (حي على الصلاة) বললে সে (لا حول ولا قوة إلا بالله) বলে এবং (حي على الفلاح) বললেও সে (لا حول ولا قوة إلا بالله) বলে। তারপর মুয়াযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বললে সেও আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে। এরপর মুয়াযযিন যখন বলে (لا إله إلا الله)তখন সেও (لا إله إلا الله) আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে বললে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [মুসলিম]
১৯. প্রিয় পাঠক! আপনি যদি আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে মেনে নেন, তাহলে আপনার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘ হে আবু সাইদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে গ্রহণ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে’’। [মুসলিম]
২০. রোযাদারদের জন্য জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম ‘রাইয়ান’, রোযাদার ছাড়া এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘জান্নাতের ভেতর ‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এখান দিয়ে রোযাদারগণ ঢুকবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশাধিকার পাবে না। বলা হবে: কোথায় রোযাদারগণ? তখন তারা সেখান দিয়ে ঢুকবে। তারা ছাড়া সেখান দিয়ে আর কেউ ঢুকবে না। তারা প্রবেশ করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর আর কেউ ঢুকতে পারবে না’’। [বুখারী ও মুসলিম]
২১. ইসলামের পঞ্চম রুকন হল আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা। এ হজ্জের প্রতিদান হলো জান্নাত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

«العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة».

‘‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী সকল গুনাহের জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ। আর পূণ্যময় হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’’। [বুখারী ও মুসলিম]
২২. যার মাধ্যমে আল্লাহ তা’লা দ্বীন ইসলামকে বুলন্দ এবং সুউচ্চ করেছেন তা হলো আল্লাহর পথে জিহাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জিহাদ করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:‘‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর কথাকে সত্য বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। অথবা তাকে জিহাদের সাওয়াব ও গণীমত লাভে ধন্য করে গাজী হিসাবে ঘরে ফিরিয়ে আনেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]
২৩. আল্লাহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর মুত্তাকী বান্দাদেরকে এ বলে আখ্যায়িত করেছেন যে, তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করে, এর দরূন তাকে জান্নাতে দেয়া হবে’’। [আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
২৪. যে সকল মহান কাজ মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায় তন্মধ্যে একটি হল: কোন ব্যক্তিকে অর্থ ঋণ দিয়ে তাকে তা স্বচ্ছলতার সাথে আদায় করার সুযোগ করে দেয়া। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন: ‘‘এক ব্যক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার পর জান্নাতে প্রবেশ করলো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো: তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে লোকটি বললো: আমি মানুষের সাথে কেনাবেচা করতাম। বিপদগ্রস্ত দরিদ্রদেরকে ঋণ পরিশোধের সময় দিতাম এবং কিছু টাকা পয়সা মাফ করে দিতাম। ফলে আল্লাহ তাকেও মাফ করে দিয়েছেন’’। [মুসলিম]
চলবে..............

No comments:

Post a Comment