world cup 2015 cowndown

Custom Search

Thursday, October 30, 2014

শয়তানের একটা চালাকির কথা বলছি শুনুন… Short Video

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
» Download 3GP « – 240p | » Download MP4 « – 720p
বক্তাঃ Nouman Ali Khan
প্রতিলিপি…
আমি আপনাদের শয়তানের একটা চালাকির কথা বলছি শুনুন। মনে করুন আপনার অফিসে যেতে দেরী হয়েছে এবং দেরী করার জন্য আপনার বস রাগ হয়ে আছেন।
অফিসে আরও অনেক মানুষ আছে। আপনি এরকম সময় কী করেন? আপনি সকলের নজর এড়িয়ে নিজের কিউবিকলে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়েন।আপনি তখন বসের সাথে দেখা করতে চান না।
অথবা মনে করুন একটা বাজে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আপনি বাড়ি ফিরলেন।যখন আপনি ক্লাস ৬ বা ৭ এ আর খারাপ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসেন তখন আপনি চুপিসারে ঘরে ঢুকবেন। কোন “আসসালামু আলাইকুম” নেই কিছু না … চুপিসারে ঢুকে আপনি ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন।মা যদি জিজ্ঞেস করেন, “আজকে স্কুলে কী হোল?” আপনি বলবেন, “তেমন কিছু না।”
আপনি যখন কাউকে হতাশ করেন তখন তার থেকে দূরে দূরে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে, যখন আমরা অশ্লীল কাজ করি, নিজেদের উপর যুলম করি, তখন আমরা কাকে হতাশ করি? আল্লাহ আযযা ওয়াযালকে! আপনি আল্লাহ্‌কে অসুন্তষ্টি করেন। শয়তান তখন এর সুযোগ নেয়। আপনার কাছে এসে সে বলে যে তুমি এখন আবার সালাহ পড়তে যাবে? ভন্ড! তুমি এতসব অশ্লীল কাজ করে এখন আবার একটা ক্লাস করতে যাবে?এখন তুমি ইবাদত করতে যাবে? তুমি তো দু’মুখো মানুষ!
তখন সে বলে হ্যাঁ আমি তো দু’মুখো মানুষ; আমার সালাহ পড়া উচিত না। শয়তান আপনার গুনাহের সুযোগ নিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখে। আপনি তখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে বিব্রত বোধ করেন।
কিন্তু একজন সত্যিকারের মুত্তাকী যখন ভুল কিছু করে তৎক্ষণাৎ সে কী করে? সে আল্লাহকে স্মরণ করে! যাকারুল্লাহ। ফা বা সুম্মাও আসেনি এখানে! “ফাসতাগফারু লিযুনুবিহিম।” তারপর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। (৩:১৩৫)
এখানে যুনুব শব্দটা দিয়ে পাপ বোঝান হচ্ছে যা এসেছে যানাব থেকে। যানাব দিয়ে মূলত বোঝান হয় এমন একটা পাপ যার কারণে আপনি অসম্মানিত বোধ করেন। এমন কোন কাজ যার কারণে আপনি লজ্জিত। বিব্রত।
আর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের কৃত লজ্জাজনক কাজ থেকে। “ওয়া মান ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লাল্লাহ।”আল্লাহ ছাড়া আর কে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে? (৩:১৩৫)
আপনি আর কার কাছে যাবেন?আর কোথায় যাবেন? আল্লাহ ছাড়া আর কে জানে আপনি আর আমি কী কী ভুল করেছি? আমাদের গুনাহের খাতায় বহু জিনিস আছে যা আল্লাহ প্রকাশ করেননি।শুধু আল্লাহই সেসব জানেন। সেসবের জন্য আল্লাহর কাছে আমাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
জান্নাতে যারা যাবে তাদের বর্ণনায় যেসব বৈশিষ্ট এসেছে তার মাঝে এটাই প্রধান বৈশিষ্ট।
“তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান। (৩:১৩৬)
এখনে যে শেষ কথাটি আপনাদের বলব, আমি আমার ফ্যামিলির সাথে একবার শপিং মলে গিয়েছিলাম।সেখানে এক মা তার ছেলেকে ভীষণ বকা দিচ্ছিল আর ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদছিল।মা ছেলেকে কষে একটা চড়ও বসিয়ে দিল। কিন্তু আপনি জানেন বাচ্চাটা তারপরও কার কাছে গেল? এর পরও বাচ্চাটা মাকেই ধরে রইল।তার মাকে ছাড়ছে না
চারপাশে সব কিম্ভূতকিমাকার বিশাল বিশাল অচেনা মানুষ। সে তাদের কাছে যেতে চায় না।যদিও তার মা তার উপর রাগ হয়েছে, হতাশ হয়েছে, তাকে বকা দিচ্ছে কিন্তু তার আশ্রয়, সুরক্ষা সে কার কাছে পাবে? তার মায়ের কাছেই!
এই দৃশ্য আমাকে ভাবিয়েছে সুবহানাল্লাহ, যখন আপনি আমি গুনাহ করি যখন আমরা আল্লাহকে হতাশ করি, তাঁর অবাধ্য হই, আমরা কার কাছে যাব? আমাদের আর কোথায় যাওয়ার আছে! তাই আমরা আল্লাহকে অসুন্তষ্টি করলেও, আর আল্লাহ আমাদের যেমন দেখতে চান তেমন আমরা হতে না পারলেও সত্যিকারের মুত্তাকী কখনোই আল্লাহর উপর আশা হারায় না।আল্লাহর উপর আশা হারানোর অনুমতি তিনি আমাদের দেননি।
এই আচরণ আমাদের রপ্ত করতে হবে।
প্রতিলিপি অনুবাদ করেছেনঃ রাবেয়া রাওশিন

Sunday, August 17, 2014

রমজানের কাযা আদায় ও শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা এক নিয়্যতে এক সাথে আদায় করা শুদ্ধ নয়

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

প্রশ্ন :  শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা ও হায়েযজনিত কারণে রমজানের ভঙ্গ হওয়া দিনগুলোর কাযা রোযা এক নিয়্যতে পালন করা কি জায়েয হবে?
উত্তর :
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
না,তা শুদ্ধ নয়। কারণ রমজানের না-রাখা রোযার কাযা পালন সম্পূর্ণ শেষ না করা পর্যন্ত শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা যাবে না।
শাইখ ইবনে উছাইমীন ‘ফাতাওয়াস্‌ সিয়াম’ (৪৩৮) এ বলেছেন :
“যে ব্যক্তি আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিনে রোযা পালন করে এবং তাঁর উপর রমজানের কাযা রোযা অনাদায় থাকে তবে তাঁর রোযা রাখাটা সহীহ। তবে তিনি যদি এই রোযার মাধ্যমে রমজানের কাযা রোযা পালনেরও নিয়্যত করেন তবে তাঁর দুটি সাওয়াব হবে। আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিন রোযা পালনের সাওয়াব ও কাযা রোযা আদায়ের সওয়াব। এটি সাধারণ নফল রোযার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রমজানের রোযার সাথে যে নফল রোযার কোন সম্পর্ক নেই। তবে শাওয়ালের ছয় রোযা রমজানের সাথে সম্পৃক্ত। সে রোযা রমজানের কাযা রোযা আদায়ের পরেই রাখতে হবে। তাই যদি কেউ কাযা আদায়ের আগে তা পালন করে তবে তিনি এর সওয়াব পাবেন না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন :
(من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر)
“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোযা পালন করল,এর সাথে শাওয়াল মাসেও ছয়দিন রোযা পালন করল, সে যেন গোটা বছর রোযা রাখল।”
আর এটি জানা বিষয় যে, যার উপর কাযা রোযা রয়ে গেছে সে রমজান মাসে রোযা পালন করেছে বলে ধরা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার কাযা রোযা আদায় সম্পূর্ণ করে।” সমাপ্ত।
সংগৃহীত:quraner alo

Saturday, August 16, 2014

মুসলিম বালকের হাতে খ্রিস্টান প্রশিক্ষকের ইসলাম গ্রহণ

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
লিখেছেনঃ আলী হাসান তৈয়ব     ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার
211
ফিলিপাইনের জাতীয় সাঁতার দলের প্রশিক্ষক, ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রি নেয়া ক্যাপ্টেন আব্দুল কারীম এরসিনাস নিজের ইসলাম গ্রহণের গল্প তুলে ধরেন এভাবে-
আল্লাহর অসংখ্য প্রশংসা যে, (এরসিনাস) খ্রিস্টান পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে তিনি আমাকে ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার সৌভাগ্যে ভূষিত করেছেন। আমার জন্ম ও শিক্ষা রাজধানী ম্যানিলার এক খ্রিস্টান পরিবেশে। এখানে কোনো মুসলিম নেই। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলগুলোতেই মুসলিমদের অবস্থান সীমিত। বাল্যকালে আমার পরিবার চাইতো গির্জায় আমি বেশি বেশি সময় দেই। বাবা যখন আমাকে গির্জায় নিয়ে যাবার সুযোগ করতে পারছিলেন না, তখন আমার বয়সে বড় এক ভাই এলেন। তিনি রোজ আমাকে গির্জায় নিয়ে যেতেন।

আমি যখন যৌবনে পা রাখলাম, গির্জায় যেতে কোনো আগ্রহ বোধ করছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিজ ধর্ম খ্রিস্টবাদ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলাম। এ সম্পর্কে বিস্তর পড়াশুনা শুরু করলাম। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে পেলাম, খ্রিস্ট ধর্মে ক্যাথলিক, প্রোটেস্টান্টসহ নানা বিভক্তি। আমার বিস্ময় বেড়ে গেল যখন দেখলাম ধর্মমতে ব্যাপক বিভক্তি থাকলেও তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদে ঈমান না আনার বেলায় এরা সব একাট্টা।

শিক্ষা জীবন শেষে সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে আমি সৌদি আরব গেলাম। এই প্রথম আমার মুসলিমদের সংস্পর্শে আসা। আগেই বলেছি ফিলিপাইনে থাকতে আমি কোনো মুসলিমের সঙ্গ পাইনি। ফিলিপাইনের মুসলিমরা তাদের অঞ্চলগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকেন। আমরা তাদের সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাই না। সরকারি প্রচার মাধ্যম যা প্রচার করে অগত্যা আমাদেরকে তা-ই বিশ্বাস করতে হয়। মিডিয়া দেশের জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করে, দক্ষিণাঞ্চলে মুসলিমদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যেসব সংঘর্ষ হয় তা রাজনৈতিক। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মুসলমানদের একটি উগ্রগোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরে। যারা কেবল তাদের দেশকে দ্বিখণ্ডিত করতে চায়। পেতে চায় তাদের রাজনৈতিক অধিকার। আল্লাহর অসংখ্য শুকরিয়া যে, আজ আমি যাদের একজনে পরিণত হয়েছি সেই মুসলিম ভাইদের কারও দিকে কখনো অস্ত্র তাক করিনি।

আমি সৌদি আরবে যাওয়ার পরেই কেবল মুসলিম সম্পর্কে জানতে পারি। তাদের অবস্থা, আচার ও আকীদা (বিশ্বাস) সম্পর্কে অবহিত হই। আমি যাদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দিতাম তাদের মধ্যে এক বালক ছিল। বয়স তার অনূর্ধ্ব তেরো। ক্ষুদে এই মুসলিমের চলাফেরা ও কাজকর্মে লক্ষ্য করতাম দারুণ এক নিয়মানুবর্তিতা। ওর স্বভাব শান্ত। জীবন যাপন সুশৃঙ্খল। আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির অন্যথা করে না সে কখনো। যথাসময়ে সালাত আদায়ে তার চেষ্টা দেখার মতো। অবসরের সিংহভাগ সময়ই কাটত তার নিবিষ্টমনে কুরআন তেলাওয়াতে।  

মুসলিম বালকটির ছিল তীক্ষ্ন মেধা আর বিস্ময়কর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। আমি তার কর্মকাণ্ডের প্রতি লক্ষ্য করছি, তার সঙ্গ আমাকে আনন্দ দিচ্ছে- এতটুকু বুঝতে পেরেই সে আমার সামনে একগাদা ইংরেজিতে অনূদিত ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বই উপস্থাপন করল। ইংরেজি অনুবাদসহ কুরআন শরীফের একটি কপিও দিল। সঙ্গে সে এও বলল, ‘আপনি এসব পড়লেই আমার সুবিন্যস্ত জীবন যাপনের রহস্য উদ্ধার করতে পারবেন।’

এই প্রথম ইসলাম সম্পর্কে জানার অভিজ্ঞতা। যত পড়লাম আমার সামনে একে একে অজানা জগত উদ্ভাসিত হতে লাগল। আমি বা আমার মতো অন্য কেউ এ জগতের সন্ধান পাননি। এসব পড়ে আমি খুব প্রভাবিত হলাম। বিশেষ করে যখন কুরআন শরীফের তরজমা পড়লাম। এ কিতাবে যে একক স্রষ্টার কথা বলা হয়েছে, তা আমার চিন্তার সঙ্গে মিলে গেল। এ চিন্তায় আমি খুব তৃপ্তি ও স্বস্থি বোধ করলাম। এরপর আমি প্রবলভাবে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলাম। এমনকি আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার আগেই নিজের নতুন নামও (আব্দুল করীম) ঠিক করে ফেললাম।আসলে ইসলামের সঙ্গে আমার এই পরিচয়ের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের পর এই বালকটির প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ। এই পরিচয়ের পরই শুরু হয় হেদায়েতের পথে আমার অভিযাত্রা।

আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রতিদিন দেখতে লাগলাম আমার সহকর্মীদের সময়মতো সালাত আদায়ের দৃশ্য। আমার কর্মক্ষেত্রেই ছিল মসজিদ। আমি পর্যবেক্ষণ করতাম তাদের সালাত। কী বিস্ময়কর তন্ময়তায় তারা নামাজে নিমগ্ন হত! সবাই একসঙ্গে রুকু করছে, সিজদা করছে! একই ইমামের পেছনে সবাই কত শৃঙ্খলা ও গুরুত্বের সঙ্গে সালাত আদায় করছে! আমার কর্মস্থলের বন্ধুরাও অনুদারতা দেখাননি। তারা আমাকে জেদ্দায় রাখা এই বালকটির মতই সহযোগিতা করেছেন। যথেষ্ট যত্ন-আত্তি করেছেন। তারা যখন আমার ইসলাম সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা, ইসলাম নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা এবং সালাতের ব্যাপারে অনন্ত কৌতূহল লক্ষ্য করলেন, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু কিতাব পড়তে দিলেন।

তাদের দেয়া গ্রন্থগুলোর মধ্যে ছিল পাদ্রীদের সঙ্গে আহমদ দিদাতের সংলাপের বই। আমি অনেক শুনেছি, মুসলমানরা অন্যদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে। সৌদি আরবে আসার এগে থেকেই আমার মাথায় এই চিত্র আকাঁ ছিল। কিন্তু এখানে এসে আমি এ ধরনের কোনো আচরণ দেখলাম না। সিজওয়ার্টের সঙ্গে আহমদ দিদাতের বিতর্ক অনুষ্ঠানের বই আমার মনে অনেক গভীর প্রভাব সৃষ্টি করল। এই লোকটির ব্যাপারে আমি যার পর নাই বিস্মিত। কিভাবে তিনি একেরপর এক প্রমাণ উপস্থাপন করেন! একটির পিঠে আরেকটি যুক্তি তুলে ধরেন! বর্ণনা আর যুক্তি কোনোটির অভাব নেই তাতে! প্রতিটি আসর পাঠে আমি হেসে মরি আর সিজওয়ার্ট পরাজিত বিষণ্ন হতে থাকে। তার প্রতিক্রিয়া ছিল অতৃপ্ত মানুষের নির্ভুল প্রতিক্রিয়া। তার অবস্থান যে ভ্রান্তির পক্ষে, মুসলমানদের আগে তা খ্রিস্টানও বুঝতে পারছিল।

এক পর্যায়ে আমি আহমদ দিদাতের কাছে চিঠি লিখলাম। এতে আমি তার যুক্তির শাণিত অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অসাধারণ ক্ষমতার প্রশংসা করলাম। তার কাছে এ ধরনের অসত্য থেকে সত্য উন্মোচনকারী বিতর্ক ও সংলাপের বেশি বেশি বই চাইলাম।

এখন আমি খ্রিস্টান থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। এতদুদ্দেশে আমার সহকর্মীদের কাছে এ জন্য আমার করণীয় কী তা জানতে চাইলাম। আর সেদিনই আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম। আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর ওপর, তাঁর রাসূলের ওপর এবং শেষ দিবসের ওপর। বিশ্বাস স্থাপন করলাম জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কেও। সে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি। আমি নিজের অপরিমেয় সৌভাগ্য অনুভব করলাম। আজ অনুগত মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করি। আমি সালাত আদায়ে মসজিদে যাই। সেখানে সিজদাবনত হয়ে এক অপার্থিব তৃপ্তি ও সুখ বোধ করি। জীবন যাপনেও তেমনি অপূর্ব প্রশান্তির আস্বাদ পাই। আমার অতীত জীবন ছিল বিশৃঙ্খলা আর উদ্দেশ্যহীন হট্টগোলে পূর্ণ। আল্লাহ আমাকে সে অবস্থার বদলে আজ আলো, শৃঙ্খলা, সচ্চরিত্র ও মূল্যবোধের জীবন দান করেছেন। সত্যিই আমি মুসলিম ভাইদের সঙ্গ পেয়ে সৌভাগ্যবান। সন্দেহ নেই ইসলাম অনেক মহান ধর্ম। এর সঙ্গে জড়িয়ে ধন্য আমার জীবন।

Wednesday, August 6, 2014

বাচ্চাদের সাথে কথা বলা

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লেখিকাঃ রেহনুমা বিনত আনিস

বাচ্চারা খুব বুদ্ধিমান হয়। তাই তাদের সাথে বুদ্ধিদীপ্ত এবং যুক্তিগ্রাহ্য কথা না বললে ওরা সহজেই বুঝতে পারে ওদের নির্বোধ ভাবা হচ্ছে। তখন হয় ওরা বিরক্ত হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে নতুবা যে ওদের নির্বোধ ভেবে কথা বল্ল তার প্রতি শ্রদ্ধা। উভয় ক্ষেত্রেই আমরা ওদের যে শিক্ষা দিতে আগ্রহী সে উদ্দেশ্য ব্যর্থ্ হয়। তাই আমাদের উচিত তাদের সাথে এমনভাবে কথা বলা যেন ওরা বুঝতে পারে আমরা তাদের নিজেদের সমকক্ষ ভাবছি এবং তাদের মতামতের মূল্যায়ন করছি। ওদের মোটামোটি মূল ব্যাপারটা সততা এবং আন্তরিকতার সাথে বুঝিয়ে দিলে ওরা আর খুব বেশী জানতে চায়না। বাকীটা ওরা নিজেরাই বুঝে নেয়। কিন্তু আমাদের সমাজে আমরা বাচ্চাদের সাথে সরাসরি কথা না বলে ধামাচাপা দিয়ে বা দায়সারা গোছের কথা বলে বা অনেক ক্ষেত্রে অন্য কথা বলে কথা ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে পরিস্থিতি জটিল করে তুলি কারণ তখন ওদের আগ্রহ আরো বেড়ে যায় এবং ওরা ভুল জায়গায় তথ্য অনুসন্ধান করতে যায়।
আমরা মূলত বাচ্চাদের সাথে যেসব বিষয়ে কথা বলি তাকে কয়েকটা ক্যাটাগরীতে বিভক্ত করা যায়, যেমন- পারিবারিক সম্পর্ক, পরিচিতজনদের সাথে ব্যবহার, অপরিতচিতজনদের সাথে সাবধানতা, জ্ঞানবিজ্ঞানের কথা, জীবনদর্শন, দায়িত্বসচেতনতা, চাহিদা, নিয়মনীতি এবং শাসন।
প্রথমত বাচ্চাদের কাছে পারিবারিক সম্পর্কগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন এবং এই কাঠামোতে তাদের অবস্থান তাদের কাছে পরিস্কার করে দেয়া দরকার। যেমন আমার যখন ছোটভাই হোল। একদিন সকালবেলা উঠে শুনি আমার সাড়ে ছয় বছরের রাজত্ব খতম। দাদু বলল, “তুমি তো কালো, দেখতেও সুন্দর না, এখন তোমার ফুটফুটে ফর্সা একটা ভাই হয়েছে, তোমাকে এখন আর আব্বু আম্মু ভালোবাসবে না, আমরা সবাই নতুন বাচ্চাটাকে আদর করব”। বাবামা’র বয়স এবং অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। ওরাও ব্যাপারটাকে পাত্তা দিলনা। তদুপরি আমাকে নানীর সাথে আলাদা রুমে পাঠিয়ে দেয়া হোল। অথচ আমিই নামাজ পড়ে দোয়া করেছিলাম যেন আমার একটা ছোটভাই হয়। সেই আমার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা! সম্পূর্ণ ব্যাপারটা আমার শিশুমনে প্রচন্ড আঘাত করল। ব্যাস, আর পায় কে? আহমদ বেচারা নেহাৎ ভদ্র ভালোমানুষটি বলে আমার সমস্ত অত্যাচার বছরের পর বছর মুখ বুজে সহ্য করে গিয়েছে। আজ এত বছর পর ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব মোহাম্মদের চেয়েও বেশী যদিও মোহাম্মদ আমার বারো বছরের ছোট হওয়ায় ওর প্রতি অনেকক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্ব পালন করা হয়েছে আমার। কিন্তু আহমদের প্রতি আমার এই অত্যাচার একটু সচেতন হলেই এড়ানো যেত।
আমি যখন বুঝতে পারলাম যে রাদিয়ার ঠিক একই ব্যবধানে ভাই বা বোন হতে যাচ্ছে সাথে সাথে আমি ওকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিলাম। ওকে বললাম, “সাকিবের একটা বোন আছে বলে ও হিসানের সাথে খেলতে পারে, ওরা দু’জন একসাথে গল্প করতে পারে। কিন্তু ওরা যখন চলে যায় তখন তো তোমার আর খেলার বা গল্প করার কেউ থাকেনা। এখন যদি আমাদের বাসায় একটা বেবী আসে তাহলে তুমি ওর সাথে খেলতে পারবে, গল্প করতে পারবে- এটা কেমন হয়?” ও বলল, “লাগবেনা, সাকিব হিসান আসলে ওদের সাথে খেলব আর নাহলে তোমার সাথেই খেলব”।
ক’দিন পর ওকে বললাম, “ধর, আল্লাহ যদি একটা বেবী পাঠিয়ে দেন তাহলে কি করব?” ও জিজ্ঞেস করল, “আল্লাহ যদি দেন তাহলে তো না বলা যাবেনা, না?” আমি বললাম, “না”। ও তখন বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে, ওকে বারান্দার পাশে যে সুপারী গাছটা আছে ওখানে রেখে দিও। তাহলে বারান্দা দিয়ে আমি ওকে খাবার দিতে পারব”। ওকে সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ দিয়ে আমি ওকে নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এবং দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার ব্যবস্থা করে দিলাম।
কিছুদিন পর ওকে বললাম, “বৃষ্টি পড়লে তো বেবীটা ভিজে যাবে তখন কি করবে?” রাদিয়া চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে বেবীটাকে সুপারী গাছ থেকে ট্রান্সফার করে বারান্দায় রাখলে খুব বেশী সমস্যা নেই। এ’সময় আমার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। ও জিজ্ঞেস করলে বুঝিয়ে বললাম, “বেবীটাকে আল্লাহ বলেছেন বড় হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন আম্মুর ভিতরে থাকতে। কিন্তু বেবীটা ভীষণ দুষ্ট। শুধু লাফালাফি করে আর আম্মু নিশ্বাস নিতে পারিনা”। সে সাথে সাথে বড়বোনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গেল, “অ্যাই বেবী, এত দুষ্টুমী করবেনা। শোন, আমি তোমাকে গান শোনাই, তুমি ঘুমাও। খবরদার আম্মুকে জ্বালাবেনা!”
এভাবে আস্তে আস্তে সে একজন অদেখা অচেনা আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে লাগল, তার আগমনের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করল যে ওকে সম্মান করবে, ওর কথা শুনবে, ওর সাথে খেলবে, গল্প করবে। রিহাম আসার কিছুদিন আগে সে ঘোষনা দিল, “বেবীকে ঘরের ভেতরে রাখা যাবে যদি বেবী আব্বুর সাথে ঘুমায়। আমি তোমার পাশেই ঘুমাব”। এই শর্তে রিহামকে ঘরে আনা হোল।
ঘরে আনার পর আম্মা একটু দাদীসুলভ হা-হুতাশ শুরু করতে চেয়েছিলেন, “আহা! রাদিয়ার তো আর আদর নাই!”সেই প্রথম আমি আম্মাকে কড়া করে বলতে বাধ্য হয়েছিলাম, “আম্মা, এই বাচ্চা নিয়ে আমি কি কষ্ট করেছি আপনি দেখেছেন। দুইমাস বয়সের বাচ্চা নিয়ে আমি চাকরী করতে গিয়েছি। বুয়া ছিলনা, দিনরাত বাচ্চা নিয়ে চাকরী করে ঘরে এসেও বাচ্চা নিয়েই থাকতাম। আর আপনি যদি আজকে ওকে বুঝাতে আসেন যে ওকে ওর মা ভালোবাসেনা, আপনার সাথে আমার বিশাল সমস্যা হয়ে যাবে। আমি যেন কাউকে রাদিয়ার সাথে এ’ধরণের কথা বলতে না শুনি”।রাদিয়াকে বুঝিয়ে বললাম, “এটা তোমার বেবী, সুতরাং ওকে দেখাশোনা, শাসন করার দায়িত্ব তোমার”। সেও তখন খুশী হয়ে ভাইকে আপন করে নিল। এটা ছিল আমার এ’যাবৎকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেহেতু আমি চাইনি আমার মেয়ে সেরকম অসহায় বোধ করুক যা আমাকে আমার ভাইকে বন্ধু ভাবার পরিবর্তে শত্রু ভাবতে শিখিয়েছিল।
আমি যেহেতু চাকরী করতাম, আমি জানতাম আমার পক্ষে আমার কোন সন্তানকেই সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখা সম্ভব হবেনা। তাই ওদের ছোটবেলা থেকেই আমি বাগানে নিয়ে যেতাম। দেখাতাম মানুষের নানামুখী আচরণ। কেউ কেউ সুন্দর ফুল দেখলে প্রশংসাসূচক কিছু বলে চলে যান, কেউ একটু গন্ধ শুঁকে দেখেন, কেউ একটু ছুঁয়ে দেখেন, কেউ ফুলটাকে গাছ থেকে ছিঁড়ে ফেলেন, আর কেউ কেউ নির্দয়ভাবে ফুলটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে আনন্দ উপভোগ করেন। আমি তাদের শেখালাম কেউ তাদের আন্তরিকভাবে ভালোবাসবে, কেউ আদর করবে কিন্তু তাতে স্বার্থের গন্ধ থাকবে, কেউ তাদের ভালোবাসবেনা আর কেউ তাদের ক্ষতি করতে চাইবে। সুতরাং তাদের মেনে নিতে হবে যে পৃথিবীতে সবাই ভালো হয়না, সবাই খারাপও হয়না। কিন্তু যতদিন জানা না যায় কে কেমন ততদিন নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ইনোসেন্স খুব ভালো জিনিস, কিন্তু এই ইনোসেন্স যদি কাউকে সহজ শিকারে পরিণত করে তাহলে তার কোন মূল্য নেই। একটা কার্টুনে ভারী মূল্যবান কথা শুনেছিলাম, পরে Platoon ছবিটিতে একই কথার পুণরাবৃত্তি শুনেছিলাম, “The first victim of war is innocence”. আপনি ততদিনই নিষ্পাপ হওয়া পোষাতে পারেন যতদিন এটা আপনার নিরাপত্তার পরিপন্থি না হয়। আজকের যুগে শিশুদের ভুলিয়ে রেখে নিরাপদ রাখা আর সম্ভব নয়। সুতরাং তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের নিজেদেরই সচেতন করে তুলতে হবে। এক বান্ধবী বলেছিলেন ওনার মা ওনাকে ছোটবেলা থেকেই এই ধারণা দিয়ে বড় করেছেন যে শ্বাশুড়ীরা মায়ের মতই বৌদের আপন করে নেয়, বৌ আসার সাথে সাথে নিজের আঁচল থেকে চাবি খুলে বৌকে তুলে দেয়। তাই তিনি যখন শ্বশুরবাড়ী গিয়ে দেখলেন যে শ্বাশুড়ী মারমুখী তিনি কিছুতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলেন না যে কি হোল এবং আদৌ সংসার করবেন কি’না ভেবেই তিনি অনেকখানি সময় ব্যায় করেছেন যা হয়ত আরো ফলপ্রসুভাবে কাজে লাগানো যেত। ছেলেমেয়েদের বোঝানো উচিত যে ভালো আত্মীয়স্বজন পাওয়া গেলে ভালো নতুবা যে যেমন তাকে সেভাবেই মেনে নিতে হবে। তাঁরা আমাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করুন বা না করুন বা যেমন আচরণই করুন, আমরা নিজেদের আচরণ এবং কাজগুলোই মূল্যায়ন করে নির্ণয় করার চেষ্টা করব যে আমরা কতটুকু ভালো বা খারাপ। তাহলে আর কারো অন্যায় আমাদের মানবসত্ত্বা থেকে আমাদের বিচ্যূত করতে পারবেনা।
সময় পেলেই আমাদের সন্তানদের সাথে বিবিধ জ্ঞানবিজ্ঞানবিষয়ক কথাবার্তা বলা উচিত যেন তারা চিন্তার খোরাক পায় এবং আজেবাজে বিষয় বা সময় নষ্ট করার মত ব্যাপারগুলো থেকে তাদের বিরত রাখা যায়। এই আলোচনার ফাঁকেফাঁকে তাদের বয়ঃসন্ধিক্ষণে যেসব পরিবর্তন আসবে তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা উচিত যেন তারা ঘাবড়ে না যায়, যেন তারা বুঝতে পারে কেন যেই ছেলে বা মেয়েটির সাথে কাল পর্যন্ত খেলা দোষণীয় ছিলোনা তার পাশে বসা যাবেনা বা তার সাথে কথাবার্তায় সংযত হতে হবে, তারা যখন পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা শুরু করবে তখন সে যেন বাবামায়ের সাথে এ’ব্যাপারে সরাসরি কথা বলতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নেয়ার সুযোগ পায় এই পথ খোলা রাখা খুব জরুরী। কারণ আমি প্রায়ই ছেলেমেয়েদের দেখেছি এসব ব্যাপারে বন্ধুবান্ধবের সাথে আলাপ পরামর্শ করতে, বলাইবাহুল্য এই বন্ধুর জানার বা ভাবার পরিধি বাবামায়ের সমকক্ষ নয় সুতরাং আমার সন্তান ভুলপথে পরিচালিত হতে পারে যদি না আমি তার সাথে এ’ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলি, তাকে বোঝাই এই আকর্ষণ অস্বাভাবিক নয় তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সঠিক সময় এবং সঠিক মানুষটিকে না পাওয়া পর্যন্ত।
আমার বিয়ের পর আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম যে আম্মা প্রতিদিন ফজরের সময় এতবড় ছেলেকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে আসেন, যে ছেলেকে উনি নিজেই আলিম বানিয়েছেন! তার কিছুদিন পর শুরু হোল জেরা, আমি প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পড়ি কি’না, ওনার ছেলে কোন কোন সময় ফাঁকি দেন। উনি এমনকি পুত্র এবং পুত্রবধুর সহকর্মীদের ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন আমরা কর্মস্থলে ঠিকভাবে নামাজ পড়ি কি’না। আমার মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করত, “আম্মা, আমরা কি নামাজ আপনার জন্য পড়ি না আল্লাহর জন্য? আপনাকে ফাঁকি দেয়া কোন ব্যাপার না যেহেতু আমরা ছ’টায় বের হই রাতে অনেক সময় বারোটা সাড়ে বারোটায় ফিরি। কিন্তু নামাজ যার জন্য তাঁকে তো ফাঁকি দেয়ার কোন জায়গা নেই। তাহলে আপনি এত প্যারানয়েড হচ্ছেন কেন?” কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি।
পক্ষান্তরে আমি আমার সন্তানদের বুঝিয়ে দিয়েছি ওদের কাজের দায়িত্ব ওদের, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতাও ওদের। ফলাফল হল, মাঝেমাঝে ওয়াক্তের কথা মনে করিয়ে দিতে হয় বটে (যেহেতু ক্যানাডায় আজান দেয়না) তবে রাদিয়া মোটামুটি নিজ দায়িত্বে নামাজ পড়ে। পর্দা করার সিদ্ধান্তও সে নিজেই নিয়েছিল যদিও আমি ওকে বলেছিলাম সে চাইলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারে কিন্তু শুরু করলে আর ছাড়তে পারবেনা যেহেতু এটা আল্লাহর নির্দেশ মানার ব্যাপার। সে আটবছর বয়সেই নিজ দায়িত্বে পর্দা শুরু করে। ওদের ছোটবেলা থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছি কোন ব্যাপারগুলো permissible এবং কোনগুলো নিষিদ্ধ, কোন কাজের কি ফলাফল। প্রতিবেশীদের কাছে শুনেছি রাদিয়া তাঁদের বাচ্চাদের বোঝায় কি করা উচিত এবং কোনটা না করা উচিত আর রিহাম তো আমার সামনেই সবার ওপর পন্ডিতি করে! ওরা অন্যায় করলে আমি ওদের ডেকে বুঝিয়ে দেই কেন তাদের বকা বা শাস্তি দেয়া হোল। কারণ আমি তাদের মারলে কোন কাজ হবেনা যদি ওরা না বোঝে ওরা ভুলটা কোথায় করল। বোঝানোর পর আমি ওদেরই জিজ্ঞেস করি ওরা শাস্তিটা সঠিক মনে করে কি’না। এতে করে তারা নিজেরদের কাজের দায়দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে সচেতন হয়।
আমি বাচ্চাদের বাসার সব কাজে জড়িত করার চেষ্টা করি যেন ওরা অনুভব করে এটা ওদের বাসা এবং এখানে সবার প্রতি এবং সবকিছুর প্রতি ওদের দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্ব ছাড়া leadership qualities গড়ে তোলা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমার বাবা বলত প্রত্যেক ব্যক্তির, সে হোক ছেলে বা মেয়ে, সবধরণের কাজ করার অভ্যাস এবং অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। আমার এস এস সি পরীক্ষার পর তিনমাসের ছুটিতে বাবা আমাকে রান্না আর কম্পিউটার রপ্ত করার জন্য বসিয়ে দিল। বাংলাদেশে এসে ঘরের renovation চলাকালীন সময় বাবা এবং মিস্ত্রীদের সাথে থেকে প্ল্যানিং, কন্সট্রাকশনের কাজ, ফার্নিচার বানানোর কাজ, ঘরবাড়ী এবং কাঠের জিনিস রঙ করা, একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা- এসব ব্যাপারে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা করতে গিয়ে শেখা হয়েছে অনেক কিছু যা পরে কাজে লেগেছে। তাই আমিও আমার মেয়েকে সব কাজ করতে দেই যেন আমাকে ফ্যাশনমাফিক বলতে না হয়, “আমার বাচ্চারা তো কিছু পারেনা!” পারবেনা কেন? প্রথমে ভুল করবে, কিছু জিনিস নষ্ট করবে, খুব বেশী সুন্দর হয়ত হবেনা- তারপর একসময় ঠিকই পারবে। কিন্তু পারেনা পারেনা করে করতে না দিলে তো সে কখনোই শিখবেনা! তাছাড়া সবাই মিলে কাজ করতে করতেই তো সে শিখবে বাবামায়ের প্রতি সহানুভূতি, ভাইবোনদের প্রতি দায়িত্ব, পারিবারিক মায়ামমতা এবং সবাই মিলে কিছু শেয়ার করার আনন্দ!
আজকাল এটা একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে যে বাবামা মনে করেন বাচ্চাদের বাসায় কোন দায়িত্ব দেয়া মানে তাদের প্রতি অবিচার করা। তাঁরা সবাইকে এত বেশী স্বাধীনতা দেন যে ভাইবোন পর্যন্ত একজন আরেকজনের সাথে কিছু ভাগাভাগি করতে রাজী হয়না, পরস্পরের প্রতি কোন দায়িত্ব বা সহানুভূতি অনুভব করার প্রয়োজন মনে করেনা। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে কথা বলার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কেনাকাটার ক্ষেত্রে সংযম। আজকাল দেখা যায় আমরা বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব জিনিসই দেই যেন “চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে”। কিন্তু একটা বাচ্চা কিছু চাইলে তার সাথে আলাপ করা দরকার সে এটা কেন চায়, এটা দিয়ে সে কি করবে, এর উপকারীতা ও অপকারিতাগুলো কি কি, জিনিসটি আদৌ তার প্রয়োজন আছে কি’না এবং এই টাকায় সে আর কি করতে পারে। এতে করে ওরা স্বার্থপর হবার পরিবর্তে needs এবং wants এর মধ্যে তফাত করতে শিখবে, অন্যের প্রয়োজনকে নিজের প্রয়োজনের ওপর অগ্রাধিকার দিতে শিখবে। সর্বোপরি আমি তাদের মৃত্যু সম্পর্কে বলি যেন তারা বুঝতে পারে যে এই জীবনের মূল্য কেবল পরবর্তী জীবনের পাথেয় সঞ্চয়ের জন্যই, সুতরাং এখানে সব পেয়ে যেতে হবে বা না পেলে হতাশ হতে হবে এই ধারণা তাদের স্পর্শ করেনা।
তবে কথা বলার সবচেয়ে বড় দিক হোল শোনা। আমাদের সন্তানেরা কি বলতে চায়, কি জানতে চায়, তাদের মনে কি প্রশ্ন তা আমাদের শুনতে হবে, জানতে হবে এবং যে শিশুটির স্বভাব যেমন সেভাবেই তার সাথে কথা বলতে হবে। যেমন বাবা আমাকে ডাকত “রেহনুমা বিনত ত্যাড়া”। আমাকে সুন্দর করে বললে আমি তার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু কেউ আমার দিকে একটু বাঁকা করে তাকালো তো সব শেষ। আমার এই স্বভাব না বোঝার কারণে মা’র সাথে আমার অপূরণীয় দুরত্বের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। আমি আমার দুই সন্তানের মধ্যেই দেখি রাদিয়া ওর বাবা আর বড়মামার মত নিয়ম মেনে চলা, অনুগত, ভালো মানুষ। কিন্তু রিহাম আমার মতই উচ্ছৃংখল, ত্যাড়া। সুতরাং রাদিয়াকে বোঝানো অনেক সহজ ওর কাছে আমাদের আশা-আকাংখা কি। কিন্তু রিহামকে পাম্প দিয়ে বলতে হয়, “যদি তুমি অমুক কাজটা কর তাহলে তোমাকে আম্মু স্পেশাল আদর করব আর যদি তমুক কাজটা কর তাহলে আম্মু আর তোমার সাথে কথা বলবনা”।
সুতরাং বাচ্চাদের সাথে কথা বলার জন্য সময় ব্যায় করতে হবে, আগে থেকে স্ক্রিপ্ট তৈরী করে বসতে হবে যেন একটা শব্দও এদিক ওদিক না হয়, যেন ওদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব প্রস্তুত থাকে আর প্রস্তুত না থাকলে যেন আমরা সৎসাহস নিয়ে বলতে পারি, “আমি পরে জেনে তোমাকে জানাব”, ওরা যেন অবহেলিত বোধ না করে এবং সবচেয়ে বড় কথা এই কথাবার্তার মাধ্যমে যেন ওরা অনুভব করে যে ওরা ব্যাপারগুলো স্পষ্ট বুঝতে পারছে এবং ওদের বাবামা ওদের ভালোবাসে বলেই এই কথাগুলো ওদের বলা হচ্ছে।
সংগৃহীত: quraneralo

Sunday, August 3, 2014

এক মিনিটে আপনি কি কি আমল করতে পারেন


প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

প্রশ্ন: আমরা অফিসে বা কর্মস্থলে ইবাদত-বন্দেগী ও নেককাজের তেমন কোন সময় পাই না। অফিসের পর বাকী যে সামান্য সময় পাই এর মধ্যে আমরা কি কি আমল করতে পারি এবং এ সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
one-minuteসময় মানুষের জীবন। সময়কে কখনো অপচয় হতে বা অকাজে নষ্ট হতে দেয়ার মত নয়। প্রজ্ঞাবান ও বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার সময়ের সদ্ব্যবহার করে। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি সময়কে অহেতুক কাজে বা অর্বাচীন কথায় ব্যয় করে না। বরং তিনি সময়কে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও ভাল কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। যে কাজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে এবং মানুষের উপকার বয়ে আনে। জীবনের প্রতিটি মিনিটে আপনি একটি করে প্রস্তর স্থাপন করতে পারেন যা আপনার মর্যাদার ভবনকে উচ্চকিত করবে এবং যা দিয়ে আপনার জাতি সৌভাগ্যমণ্ডিত হতে পারবে।
আপনি যদি মর্যাদার শিখরে পৌঁছুতে চান এবং আপন জাতিকে সৌভাগ্যমণ্ডিত করতে চান তবে আরাম-আয়েশকে না-বলুন এবং অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করুন।
এক মিনিট সময়ের মাঝে অনেক ভাল কাজ করা যেতে পারে এবং বিশাল সওয়াব পাওয়া যেতে পারে। শুধু আপনার জীবনের এক মিনিট সময় ব্যয় করে আপনি আপনার দানের পরিধি বাড়াতে পারেন, কোন কিছু উপলব্ধি করতে পারেন, কোন কিছু মুখস্থ করতে পারেন, যে কোন নেককাজ করতে পারেন। শুধু এক মিনিটেই আপনার ভালো কাজের আমলনামায় এই আমলগুলো লেখা হয়ে যাবে যদি আপনি জানেন কিভাবে এক মিনিট সময়কে কাজে লাগাতে হয় এবং বাস্তবে কাজে লাগান।
কবি বলেন:
“প্রতিটি মিনিটে বৃহত্তর কল্যাণে প্রবৃত্ত হও।
যদি তুমি এক মিনিটকে ভুলে যাও তবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ভুলে যাবে; বরঞ্চ বাস্তবতাকে ভুলে যাবে।”
আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় এক মিনিটে আপনি যে যে আমলগুলো করতে পারেন নিম্নে এর কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হলো:
(১) এক মিনিটে আপনি সূরা ফাতিহা মনে মনে দ্রুতগতিতে ৩ বার পড়তে পারেন। কেউ কেউ হিসাব কষে দেখিয়েছেন একবার সূরা ফাতিহা পড়লে ৬০০ টিরও বেশি নেকি পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি তিনবার সূরা ফাতিহা পাঠ করেন তবে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় ১৮০০ এর বেশি নেকি হাসিল করবেন। এত নেকী আপনি এক মিনিটেই পাচ্ছেন।
(২) এক মিনিটে আপনি সূরা ইখলাস (ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) মনে মনে দ্রুতগতিতে ২০ বার পড়তে পারেন। এই সূরা একবার পাঠ করলে কুরআন শরীফের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি এ সূরাটি ২০ বার পাঠ করেন তবে তা ৭ বার কুরআন পড়ার সমতুল্য। অতএব আপনি যদি এ সূরাটি প্রতিদিন এক মিনিটে ২০ বার পাঠ করেন তবে মাসে আপনার ৬০০ বার পাঠ করা হয় এবং বছরে ৭২০০ বার পাঠ করা হয়। যার সওয়াব ২৪০০ বার সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার সমতুল্য।
(৩) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের এক পৃষ্ঠা পাঠ করতে পারেন।
(৪) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের ছোট একটি আয়াত মুখস্থ করতে পারেন।
(৫) এক মিনিটে আপনি নিম্নোক্ত দোয়াটি ২০ বার পড়তে পারেন।
لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
এর সওয়াব ইসমাঈল (আঃ) এর বংশের ৮ জন দাসকে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করার সমান।
(৬) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِه) ১০০ বার পড়তে পারেন। যে ব্যক্তি একদিনে এই দোয়াটি ১০০ বার পড়ে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় না কেন।
(৭) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، ) ও (سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ) ৫০ বার পড়তে পারেন। এ দুটি এমন বাক্য যা পড়তে খুব সহজ; আমলের পাল্লাতে অনেক ভারী হবে; রহমানের নিকটে অতি প্রিয়; যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম।
(৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সুব্‌হানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আক্‌বার পাঠ করা যা কিছুর উপর সূর্য উদিত হয়েছে সবকিছু থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম (২৬৯৫)]আপনি এক মিনিটে বাক্যগুলো ১৮ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যগুলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এগুলো সর্বোত্তম কথা এবং আমলের পাল্লাতে এগুলোর ওজন অনেক বেশি হবে। যেমনটি এ মর্মে বর্ণিত সহীহ হাদিসসমূহে এসেছে ।
(৯) এক মিনিটে আপনি (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ) (অর্থ- কোন উপায়-সামর্থ্য নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া) ৪০ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যটির সওয়াব জান্নাতের জন্য সঞ্চিত অমূল্য রত্ন; যেমনটি বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে। একই ভাবে এটি কষ্টসাধ্য দায়িত্ব বহন ও কঠিন কাজসমূহ আঞ্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে এক মহৌষধ।
(১০) এক মিনিটে আপনি (لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله) (অর্থ- আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই) প্রায় ৫০ বার পড়তে পারেন। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য ও তাওহীদের বাণী। এটি কালিমায়ে তাইয়্যেবা (উত্তম বাণী) ও সুদৃঢ় বাক্য। যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে এই বাক্য তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এছাড়াও এর ফজিলত ও মর্যাদার ব্যাপারে আরও অনেক বর্ণনা রয়েছে।
(১১) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَى نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ) (আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমান, তাঁর সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান, তাঁর বাক্যমালার কালির সমান) এ দোয়াটি ১৫ বারের বেশি পড়তে পারেন। সাধারণ তাসবীহ ও যিকিরের চেয়ে এ বাক্যগুলো পাঠ করার সওয়াব অনেকগুণ বেশি যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহীহ হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে।
(১২) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কাছে ১০০ বারের বেশি ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন তথা (أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ) পড়তে পারেন। এর ফজিলত আপনার অজানা নয়। এটি ক্ষমা প্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের উপায়। এটি সুখময় জীবন, শক্তি বৃদ্ধি, বিপদ-আপদ রোধ, সকল কাজ সহজীকরণ, বৃষ্টি বর্ষণ, সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যম।
(১৩) এক মিনিটে আপনি সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে পারেন যা দ্বারা আল্লাহ হয়ত এমন কোন কল্যাণের পথ খুলে দিবেন যা আপনি ভাবতেও পারেননি।
(১৪) এক মিনিটে আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ৫০ বার দরূদ পাঠ করতে পারেন। শুধু পড়বেন “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। এর প্রতিদানে আল্লাহ আপনার উপর ৫০০ বার সালাত (রহমত) পাঠাবেন। কারণ একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ ১০ বার এর প্রতিদান দেন।
(১৫) এক মিনিটে আপনার মন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, তাঁর ভালবাসা, তাঁর ভয়, তাঁর প্রতি আশা এবং তাঁর প্রেমে উদ্বেল হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি উবূদিয়্যাহ্‌ (আল্লাহর দাসত্ব) এর স্তরসমূহ অতিক্রম করতে পারেন; হতে পারে সে সময় আপনি হয়ত আপনার বিছানায় শুয়ে আছেন অথবা কোন পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন।
(১৬) এক মিনিটে আপনি সহজবোধ্য উপকারী কোনো বইয়ের দুই পৃষ্ঠার বেশি পড়তে পারেন।
(১৭) এক মিনিটের টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি ‘সিলাতুর রাহেম’ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার আমল পালন করতে পারেন।
(১৮) এক মিনিটে আপনি দুই হাত তুলে ব্যাপক অর্থবোধক দোয়াগুলো হতে পছন্দমত যে কোন দোয়া করতে পারেন।
(১৯) এক মিনিটে আপনি কয়েকজন ব্যক্তিকে সালাম দিতে পারেন ও তাদের সাথে মুসাফাহা করতে পারেন।
(২০) এক মিনিটে আপনি কোন ব্যক্তিকে একটি মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে পারেন।
(২১) এক মিনিটে আপনি একটি ভাল কাজের আদেশ করতে পারেন।
(২২) এক মিনিটে আপনি একজন ভাইকে নসিহত করতে পারেন।
(২৩) এক মিনিটে আপনি একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারেন।
(২৪) এক মিনিটে আপনি পথ থেকে ক্ষতিকর কোন বস্তু অপসারণ করতে পারেন।
(২৫) এই এক মিনিটের সদ্ব্যবহার অবহেলায় কাটানো বাকি সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করার অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করতে পারে।
ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
“যখন ঘুমন্ত লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন আমি আমার চোখের অশ্রু ফেলি এবং শ্রেষ্ঠ কবিতার একটি চরণ বারবার আওড়াতে থাকি।
কোন জ্ঞান অর্জন ছাড়া রাতগুলো কেটে যাবে এবং আমার জীবন থেকে হিসেব করা হবে- এটি কি সময়ের অপব্যয় নয়? ”
পরিশেষে জানুন আপনার ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও আল্লাহর নজরদারির অনুভূতির ভিত্তিতে আপনার প্রতিদান বাড়বে, আপনার নেকীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
জেনে রাখুন, এই আমলগুলোর বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। এগুলোর জন্য আপনার পবিত্রতার প্রয়োজন নেই, ক্লান্তি বা কায়িক শ্রম নেই। বরং আপনি এ আমলগুলো করতে পারেন যখন আপনি পায়ে হেঁটে চলছেন অথবা গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন অথবা শুয়ে আছেন অথবা দাঁড়িয়ে আছেন অথবা বসে আছেন অথবা কারও জন্য অপেক্ষা করছেন।
একইভাবে এ আমলগুলো সুখী হওয়ার উপকরণ, আত্মপ্রশান্তির মাধ্যম, চিন্তা ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার উপায়। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দিন। আমাদের নবীর প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
সংগৃহীত: quraneralo

আল্লাহর শপথ আমি নামাজ পড়তাম


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
দুটি নিয়ামত এমন আছে, যে দুটোতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হল সুস্থতা আর অবসর। (সহীহ বুখারী ৫৯৭০, ইফা)
এটি একটি সচিত্র সত্যি ঘটনা যা আপনার জীবন, আপনার চিন্তা ধারা ও জীবনের উদ্দেশ্য বদলে দিতে পারে।
ঘটনাটি বাহরাইনের ইব্রাহিম নাসের নামের এক যুবকের। সে জন্মগতভাবেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত, শুধু তার আঙ্গুল ও মাথা নাড়াতে সক্ষম। এমনকি তার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জন্যও তাকে যন্ত্রপাতির সাহায্য নিতে হয়।
এই যুবকটির একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল একদিন শেইখ নাবীল আল আওদির সাথে দেখা করার। এইজন্য ইব্রাহীমের বাবা শেইখের সাথে ফোনে আলাপ করলেন ইব্রাহীমের সাথে তার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
ইনি শেইখ নাবীল। ইব্রাহীম শেইখ নাবীলকে তার ঘরের দরজা খুলে ঢুকতে দেখে কি ভীষণ খুশী হয়ে গেল! আমরা তার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ তার চেহারাতেই দেখতে পাবো কারণ সে কথা বলে বোঝাতেও অক্ষম।
শেইখ নাবীল ইব্রাহীমের ঘরে ঢোকার মুহূর্ত।
আর এটি হল শেইখ নাবিলকে দেখে ইব্রাহীমের অভিব্যক্তি।
লক্ষ্য করুন ইব্রাহীমের গলায় শ্বাস নেওয়ার যন্ত্রটি। সে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতেও অক্ষম।
শেইখ নাবীল ইব্রাহীমের কপালে চুমু খাচ্ছেন
ইব্রাহীম তার বাবা, চাচা ও শেইখ নাবীলের সাথে।
এভাবে শেইখ নাবীল আর ইব্রাহীম আলাপ করলেন ইন্টারনেটে ইসলামের দাওয়াত এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার ব্যপারে। তারা কিছু ঘটনাও আলোচনা করলেন।
এবং তাদের আলাপচারিতার মাঝে শেইখ নাবীল ইব্রাহীমকে একটি প্রশ্ন করলেন। যে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ইব্রাহীম কেঁদে ফেললেন, তার গাল বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ল।
ইব্রাহীম না কেঁদে পারলেন না যখন তার কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতি মনে পড়ল।
শেইখ নাবীল ইব্রাহীমের চোখের পানি মুছে দিচ্ছেন।
আপনি কি জানেন কি ছিল সেই প্রশ্ন যা ইব্রাহীমকে কাঁদিয়ে দিল?
শেইখ জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আচ্ছা ইব্রাহীম, আল্লাহ যদি তোমাকে সুস্থ করতেন…তাহলে তুমি কি করতে?
আর তখন ইব্রাহীম এমনভাবে কাঁদলেন যা শেইখ, ইব্রাহীমের বাবা, তার চাচা এবং ঘরের প্রত্যেককে কাঁদিয়ে দিল…এমন কি ক্যামেরাম্যানকেও।
তার উত্তর ছিলঃ আল্লাহর শপথ, আমি তাহলে আনন্দের সাথে মসজিদে যেয়ে আমার নামাজ পড়তাম। আমি আমার সুস্বাস্থ্যের নেয়ামত এমন প্রতিটি কাজে ব্যবহার করতাম যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কর্মশক্তি ও সুস্বাস্থ্যের নেয়ামত দিয়ে রহমত করেছেন।
কিন্তু আমরা মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ি না !!! অথচ আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার অথবা টিভির সামনে বসে সময় কাটিয়ে দেই।
“এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য যার আছে অন্তঃকরণ অথবা যে শ্রবণ করে একাগ্রচিত্তে।” (সূরা ক্বাফঃ ৩৭)
আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন আর সেই পথে আমাদের দৃঢ় রাখেন। আমীন।

সালাত ও পবিত্রতা – ওজু, গোসল ও সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
                                              
                                            রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-


শায়খ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)
অনুবাদ : মোহাম্মদ রকীবুদ্দীন আহমাদ হুসাইন |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ওজু, গোসল ও সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি
সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য এবং দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম ও সৃষ্টির সেরা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীগণের উপর।
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুখাপেক্ষী বান্দাহ মুহাম্মদ ইবন ছালেহ আল-উসাইমীন বলছিঃ
আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূলের আলোকে, ওজু, গোসল ও সালাত সম্পর্কে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি লিখা হলো।
ওজুর পদ্ধতি
ওজু
এটি একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা ছোট ছোট নাপাকী যেমন পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গমণ, গভীর নিদ্রা ও উটের গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি থেকে অর্জন করতে হয়।
ওজু সম্পাদনের পদ্ধতি
  1. প্রথমে মনে মনে ওজুর নিয়ত করবে। এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা যাবে না। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজু, সালাত বা অন্য কোনো ইবাদতের শুরুতে নিয়ত উচ্চারণ করেননি। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তা‘আলা তো অন্তরের সবকিছু সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত, সুতরাং অন্তরস্থ কোনো বিষয় সম্পর্কে উচ্চারণ করে তাঁকে খবর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
  2. এরপর আল্লাহ নাম নিতে গিয়ে বলবেন : “বিসমিল্লাহ”।
  3. তারপর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে।
  4. অতঃপর কুলি করবে এবং পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝাড়বে।
  5. এরপর আপন চেহারা তিনবার ধৌত করবে, প্রস্থে এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত এবং দৈর্ঘ্যে মাথার চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নীচ পর্যন্ত।
  6. এরপর উভয় হাত আঙ্গুলির অগ্রভাগ থেকে কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডানহাত পরে বামহাত ধৌত করবে।
  7. এরপর ভিজা হাতদ্বয় দিয়ে একবার মাথা মসেহ করবে; হাতদ্বয় প্রথমে মাথার সম্মুখভাগ থেকে পশ্চাৎভাগে নিয়ে যাবে এবং পুনরায় মাথার অগ্রভাগে নিয়ে আসবে।
  8. তারপর উভয় কান একবার করে মসেহ করবে; উভয় তর্জনী অঙ্গুলীর অগ্রভাগ উভয় কানের ভিতরে ঢুকাবে এবং উভয় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে বহির্ভাগ মসেহ করবে।
  9. এরপর উভয় পা আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ থেকে উভয় গোড়ালী পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডান পা পরে বাম পা ধৌত করবে।
গোসল
গোসল
একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা জানাবাত ও হায়েয (ঋতু) জাতীয় বড় নাপাকি থেকে অর্জন করতে হয়।
গোসল করার পদ্ধতি
  1. প্রথমতঃ অন্তরে গোসলের নিয়ত করবে; মুখে তা উচ্চারণ করা যাবে না।
  2. এরপর আল্লাহ তা‘আলার নাম নিতে গিয়ে বলবে : ‘বিসমিল্লাহ’
  3. তারপর পূর্ণভাবে ওজু করবে।
  4. এরপর মাথার উপর পানি ঢালবে; পানি যখন ছড়িয়ে পড়বে তখন গায়ের উপর তিনবার ব্যাপকভাবে পানি ঢেলে দিবে।
  5. অতঃপর সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করবে।
তায়াম্মুম
তায়াম্মুম
একটি অপরিহার্য পবিত্রতা, যা পানি না পাওয়া অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম অবস্থায় মাটির দ্বারা ওজু বা গোসলের পরিবর্তে অর্জন করা হয়।
 তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
প্রথমে অজু বা গোসল যে বিষয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে তার নিয়ত করবে। অতঃপর মাটিতে অথবা মাটি সংশ্লিষ্ট দেয়াল বা অন্য কিছুর উপর হাত মারবে এবং চেহারা ও উভয় পাঞ্জা মসেহ করবে।
সালাত
সালাত
আর তা বহুবিধ কথা ও কাজ সম্বলিত এমন একটি ইবাদত যার শুরু হয় ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবার) বলে এবং শেষ হয় ‘সালাম’ (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলে।
যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে তখন তার উপর ওয়াজিব হয় সে যেন এর পূর্বে ওজু করে যদি সে ছোট নাপাকি অবস্থায় থাকে; অথবা সে যেন তায়াম্মুম করে যদি সে পানি না পায় অথবা পানি ব্যবহারে সে অক্ষম হয়। এরপর সে যেন তার সমস্ত শরীর, কাপড় ও সালাতের স্থান নাজাসাত (নাপাক বস্তু) থেকে পবিত্র রাখে।
 সালাত আদায়ের পদ্ধতি
  1. প্রথমে সম্পূর্ণ শরীরসহ কিবলামূখী হবে; অন্য কোনো দিকে ফিরবে না বা লক্ষ্যও করবে না।
  2. এরপর যে সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে অন্তরে তার নিয়ত করবে; এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করবে না।
  3. এরপর ইহরামের তাকবীর দিতে গিয়ে বলবে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং তাকবীরের সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
  4. তারপর ডান হাতের পাঞ্জা বাম হাতের পাঞ্জার বহির্ভাগে ধরে বুকের উপর রাখবে।
  5. এরপর ইস্তেফতাহের (প্রারম্ভিক) দু‘আ পড়বে এবং বলবে,

«اللهم باعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب اللهم تقّني من خطاياي كما ينقى الثوب الأبيض من الدنس اللهم أغسلني من خطاياي بالماء والثلج والبرد»

উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা বা-ইদ বাইনী বাইনা খাতায়ায়া- কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কীনী মিন খাতায়ায়া কামা ইনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্ দানাসী, আল্লাহুম্মাগছিলনী মিনাল খাতায়ায়া- বিল মা-ঈ ওয়াস সালজী ওয়াল বারাদি।”
অর্থ: হে আল্লাহ! পূর্ব ও পশ্চিম যেমন পরস্পর থেকে দূরে আমাকে তেমনি আমার পাপ থেকে দূরে রাখ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পাপ মুক্ত করে এমনভাবে পরিস্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড় ধৌত করলে তা ময়লা থেকে পরিস্কার হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।” অথবা বলবেঃ

«سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»

উচ্চারণঃ “সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারাকাস্ মুকা ওয়াতা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।”
অর্থ: “সমস্ত মর্যাদা ও গৌরব তোমারই হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা কেবল তোমারই জন্য, তোমার নামেই সমস্ত বরকত ও কল্যাণ এবং তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে। আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই।
  1. এরপর বলবেঃ

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم

“আউজু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রজীম” অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ তা‘আলার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
  1. অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বে এবং বলবেঃ

﴿ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ [الفاتحة: ١،  ٧]

অর্থ: ১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের রব্ব। ২. যিনি অতি মেহেরবান ও পরম দয়ালু। ৩. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। ৪. হে আল্লাহ, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ৫. আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ দেখাও। ৬. ঐ সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ। ৭. ওদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গজব নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।
তারপর বলবেঃ ‘আমী-ন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ কবুল কর’।
  1. এরপর পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে যে পরিমাণ সহজসাধ্য হয় পড়বে, তবে ফজরের সালাতে দীর্ঘ ক্বিরাত পড়ার চেষ্টা করবে।
  2. তারপর রুকুতে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি তা‘যীম প্রদর্শনার্থে মাথাসহ আপন পিঠ নত করবে। রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে। সুন্নাত হলোঃ নামাজী রুকুতে তার পিঠ নত করবে, মাথা তার বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলিগুলি খোলা অবস্থায় উভয় হাঁটুতে রাখবে।
  3.  রুকুতে তিনবার سبحان ربي العظيم ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলবে। আর যদি এর অতিরিক্ত ‘সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি’ বলে তা হলে উত্তম হয়।
  4. তারপর রুকু হতে এই বলে মাথা উঠাবেঃ سمع الله لمن حمده ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ এবং উভয় হাত উভয় কাঁধ বরাবর উঠাবে। মুক্তাদী হলে উহার পরিবর্তে বলবেঃربنا ولك الحمد  ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি আমাদের রব এবং তোমারই জন্য সর্ববিধ প্রশংসা।
  5.  এরপর রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর বলবেঃ

ربنا ولك الحمد ملء السموات والأرض وملء ما شئت من شيء بعد

উচ্চারণঃ “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদ ওয়া মিলআ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু”
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা যা আকাশ ভর্তি করে দেয়, যা পৃথিবী পূর্ণ করে দেয় এবং এই গুলি ছাড়া তুমি অন্য যা কিছু চাও তা পূর্ণ করে দেয়।
  1.  এরপর বিনীত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রথম সিজদা করবে এবং সিজদায় গিয়ে বলবেঃ ‘আল্লাহু আকবার’ অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। সাতটি অঙ্গের উপর সিজদাহ করবে; অঙ্গগুলো হলো: নাকসহ কপাল, উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের অগ্রভাগ। উভয় মাসল শরীরের উভয় কিনারা থেকে ব্যবধানে রাখবে, যমীনের উপর উভয় বাহু কনুই পর্যন্ত বিছাবে না এবং অঙ্গলীসমূহের অগ্রভাগ কিব্লার দিকে রাখবে।
  2. সিজদায় গিয়ে তিনবার বলবেঃ سبحان ربي الأعلى “সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা” অর্থাৎ আমার সর্বোচ্চ প্রভুর প্রশংসা করছি।
আর যদি এর অতিরিক্ত নিম্নের তাসবীহও পাঠ করে তাহলে উত্তম হয়ঃ

سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী”
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার প্রশংসা সহকারে, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর।”
  1. এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদাহ থেকে মাথা উঠাবে।
  2. তারপর উভয় সিজদাহ’র মধ্যবর্তী সময়ে বাম পায়ের উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। ডান হাত ডান জানুর শেষ প্রান্তে অর্থাৎ হাটু সংলগ্ন অংশের উপর রাখবে এবং খিনছির ও বিনছির আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে রাখবে, তর্জনী উঠিয়ে রাখবে ও দু‘আর সময় নাড়াবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীর অগ্রভাগ মধ্যমাঙ্গুলীর অগ্র ভাগের সাথে গোলাকারে মিলিয়ে রাখবে। এইভাবে বাম হাতের আঙ্গুলগুলি খোলা অবস্থায় হাঁটু সংলগ্ন বাম জানুর উপর রাখবে।
  3. উভয় সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে বলবেঃ

رب اغفرلي وارحمني واهدني وارزقني واجبرني وعافني

  1. এরপর আল্লাহর প্রতি বিণীত হয়ে কথা ও কাজে প্রথম সিজদাহ’র মত দ্বিতীয় সিজদাহ্ করবে এবং সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে।
  2. এরপর দ্বিতীয় সিজদাহ থেকে আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাবে এবং কথা ও কাজে প্রথম রাকা‘আতের মত দ্বিতীয় রাকা‘আত পড়বে, তবে প্রথম রাকা‘আতের মত প্রারম্ভিক দু‘আ পড়তে হবে না।
  3. তারপর দ্বিতীয় রাকা‘আত শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বসবে এবং উভয় সিজদাহর মধ্যবর্তী বৈঠকের মতই বসবে।
  4. এই বৈঠকে তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়বে; আর তাশাহ্হুদ হলোঃ

التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله -

«اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنّك حميد مجيد» (رواه البخاري ومسلم)

উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্ব ত্বাইয়্যিবাতু আস্‌সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহুআসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল্-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ-লা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
অর্থ: “যাবতীয় সম্মান-সম্ভাষণ, সকল সালাত, ও পবিত্রতা সমস্তই আল্লাহর জন্য, হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি সালাত প্রেরণ কর, যেমনভাবে সালাত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত প্রেরণ কর, যেমনভাবে বরকত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
এরপর বলবেঃ

أعوذ بالله من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ومن فتنة المحيا والممات ومن فتنة المسيح الدجال -

উচ্চারণঃ “আঊযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন ফিত্নাতিল্ মাহ্ইয়া ওয়াল মামাতি ওয়া মিন ফিত্নাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জালি।
অর্থ: “আমি আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে।”
এরপর আপন প্রভু- প্রতিপালকের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল চেয়ে পছন্দমত যে কোনো দু‘আ করতে পারে।
  1. পরিশেষে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলবে। এই ভাবে বাম দিকেও মুখ ফিরিয়ে সালাম বলবে।
  2. সালাত যদি তিন রাকা‘আতী অথবা চার রাক‘আতী হয় তা হলে প্রথম তাশাহ্হুদ অর্থাৎ আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু” পড়ে থেকে যাবে।
  3. এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
  4. এরপর অবশিষ্ট সালাত দ্বিতীয় রাকা‘আতের বর্ণনা অনুযায়ী আদায় করবে; তবে সালাতের এই অংশে দাঁড়িয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে।
  5. এরপর তাওয়াররুক করে বসবে অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা ডান পায়ের নিম্ন দিয়ে বের করে রাখবে। পাছা যমীনের উপর স্থির রাখবে এবং উভয় হাত উভয় জানুর উপর সেইভাবে রাখবে যেভাবে প্রথম তাশাহ্হুদের সময় রেখেছিল।
  6. এই বৈঠকে পূর্ণ তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠ করবে।
  7. অবশেষে “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম করবে।
 যে সব বিষয় সালাতে মাকরূহ
  1. সালাতের মধ্যে মাথা বা চক্ষু দিয়ে এদিক-ওদিক ভ্রুক্ষেপ করা। আকাশের দিকে চক্ষু উত্তোলন করা হারাম।
  2. সালাতের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে নড়া-চড়া করা।
  3. সালাতের মধ্যে ব্যস্ত রাখে অথবা মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন কোনো বিষয় সঙ্গে রাখা; যেমন, ভারী কোনো বিষয় বা রঙ্গিন কোনো কিছু যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
  4. সালাতের মধ্যে তাখাছ্ছুর অর্থাৎ কোমরে হাত রাখা।
যে সব বিষয় সালাত বাতিল করে
  1. ইচ্ছাকৃত কথাবর্তা বলা, তা কম হলেও।
  2. সম্পূর্ণ শরীর ক্বিবলার দিক হতে ফিরে যাওয়া।
  3. পিছন দিক থেকে বাতাস বের হওয়া অথবা ওজু গোসল ওয়াজিব করে এমন কোনো বিষয় ঘটে যাওয়া।
  4. বিনা প্রয়োজনে পরপর অধিক মাত্রায় নড়াচড়া করা।
  5. হাসি, তা কম হলেও সালাত বাতিল করে।
  6. ইচ্ছা করে অতিরিক্ত রুকু, সিজদা, ক্বিয়াম বা উপবেশন করা।
  7. ইচ্ছা করে ইমামের আগে-আগে যাওয়া।
  8. ওজু ভেঙ্গে যাওয়া।
সালাতে ভুলের সিজ্দাহ আদায় সম্পর্কে কয়েকটি হুকুম
  1. যদি কেউ সালাতে ভুল করে অতিরিক্ত কোনো রুকু, সিজদাহ ক্বিয়াম বা উপবেশন করে ফেলে তাহলে সে প্রথম সালাম ফিরিয়ে ভুলের জন্য দু’টি সিজদাহ্ দিবে এবং আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে পঞ্চম রাকা‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে গেল, অতঃপর তার ভুল স্মরণ হ’ল অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, তখন সে বিনা তাকবীরে ফিরে গিয়ে বসে পড়বে এবং তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ে সালাম ফিরাবে; তারপর দুই সিজদাহ্ দিয়ে উভয় দিকে সালাম ফিরাবে। এ ভাবে যদি সে এই অতিরিক্ত কাজ সম্পর্কে সালাত শেষ হওয়ার পূর্বে অবগত না হয় তাহলে শেষ পর্যায়ে সে ভুলের দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম ফিরাবে।
  1. কেউ যদি ভুলে সালাত শেষ করার পূর্বে সালাম করে ফেলে এবং কিছু সময়ের মধ্যে তা স্মরণ হয়ে যায় অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তখন সে প্রথম সালাতের উপর ভিত্তি করে অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করবে, তারপর সালাম করবে; অতঃপর দু’টি সিজদাহ দিয়ে আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে ভুল করে তৃতীয় রাকা‘আতে সালাম করে ফেললো, অতঃপর স্মরণ হলো অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল; তখন সে উঠে চতুর্থ রাকা‘আত পড়ে সালাম করবে, তারপর ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিয়ে পুনরায় সালাম করবে। আর যদি সালাতের অনেক পরে এই ভুল স্মরণ হয় তাহলে সালাত প্রথম থেকে পুনরায় পড়তে হবে।
  1. যদি কোনো লোক প্রথম তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ) অথবা সালাতের অন্য কোনো ওয়াজিব ভুলে ছেড়ে দেয়, তাহলে সে সালামের পূর্বে শুধু ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করলে চলবে; অন্য কিছু করতে হবে না। আর যদি স্থান ত্যাগের পূর্বে স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই তা পড়ে নিবে; অন্য কিছু করতে হবে না। তবে স্থান ত্যাগের পর এবং পরবর্তী স্থানে পৌঁছার পূর্বে যদি স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সেই স্থানে ফিরে তা আদায় করে নিবে।
উদাহরণঃ যদি নামাজী প্রথম তাশাহ্হুদ ভুলে না পড়ে তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য পূর্ণ ভাবে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে আর প্রত্যাবর্তন না করে শেষ বৈঠকে সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ আদায় করবে। আর যদি তাশাহহুদের জন্য বসে তাশাহহুদ পড়া ভুলে যায়, এরপর দাঁড়ানোর পূর্বে তার স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই সে তাশাহহুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তার অন্য কিছু করতে হবে না। এ ভাবে যদি সে তাশাহ্হুদের জন্য না বসে দাঁড়িয়ে যায় এবং পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর পূর্বে তা স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সে ফিরে বসে তাশাহ্হুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তবে আলেমগণের মতে এমতাবস্থায় সে ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করবে। কেননা, সে তাশাহহুদ না পড়ে উঠতে গিয়ে সালাতে অতিরিক্ত কাজ করে ফেলেছে।
  1. কারো যদি সালাতে সন্দেহ হয় যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একটির প্রতি তার বেশী ঝোঁক না হয়, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।
উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে দ্বিতীয় রাকা‘আতে সন্দেহে পতিত হয়, এটা দ্বিতীয় রাকা‘আত না তৃতীয় রাকা‘আত? এবং কোনো একদিকে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।
  1. কেউ যদি সালাতে সন্দেহ করে যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একদিকে তার অধিকতর ঝোঁক থাকে তখন সে ঐ দিকের উপর ভিত্তি করে, তা কম হোক অথবা বেশী হোক, সালাত পূর্ণ করবে; অতঃপর সে সালামের পর দু’টি ভুলের সিজদাহ আদায় করে আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকা‘আতে তার সন্দেহ হলো: সালাত দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত; তবে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে তিন রাকা‘আতের। এমতাবস্থায় সে তিন রাকা‘আত ধরেই সালাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে; অতঃপর ভুলের দুই সিজদা দিয়ে পুনরায় সালাম করবে।
সালাত শেষ করার পর যদি কারো সন্দেহ হয় তা হলে এর প্রতি সে যেন ভ্রুক্ষেপ না করে। হ্যাঁ, যদি স্থির বিশ্বাস হয় তা হলে সে সেমতেই কাজ করবে।
যদি কেউ বেশী বেশী সন্দেহ পোষণকারী হয় তাহলে সে তার সন্দেহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না। কারণ, এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা।
আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয়নবী, তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।